সিপাহি রুবেল ট্রেনে পাথর নিক্ষেপকারী দুজনকে ধরল, রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে পঞ্চগড়গামী

একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিমানবন্দর স্টেশনে প্রবেশ করে। তিন যুবক স্টেশনের ভিতরে একটি

রেললাইন ধরে হাঁটছিলেন। সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। ট্রেন ছাড়ার পর যখন গতি একটু বেড়ে গেল, তখন তিনজনের

মধ্যে একজন হঠাৎ ট্রেনের দিকে একটি বড় পাথর নিক্ষেপ করল। পাথরটি জানালায় আঘাত

করেনি বরং ট্রেনের গাড়ির শরীরে আঘাত করেছে। সঙ্গে সঙ্গেই একটা শব্দ হয় এবং জায়গার রঙ উঠে

যায়। স্টেশনের ভিতরে কয়েকজন মহিলা কাজ করছিল, তারাই প্রথম চিৎকার করে “ঢিল ছুড়ছে,

ধরেছে, ধরেছে।কথাগুলো বলেছেন বিমানবন্দর রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সার্কেলের সিপাহী মো. রুবেল

মিয়া। তিনি ২০ অক্টোবর সকাল ১০:৪৫ মিনিটে স্টেশনে ডিউটিতে ছিলেন। তবে তিনি যেখানে ছিলেন

সেখান থেকে সরাসরি আসামিদের কাছে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লেগেছে। সে বাঁশি বাজাতে থাকে।

এরপর থেকে অভিযুক্তরা স্টেশন ছেড়ে চলে গেছে। কিন্তু রুবেল মিয়া থেমে থাকেননি।

আরও নতুন নিউস পেতে আমাদের সাইট:amarjobs.xyz

সিপাহি রুবেল ট্রেনে পাথর নিক্ষেপকারী দুজনকে ধরল

স্টেশনে রাত কাটানো এক শিশু রুবেল মিয়াকে জানায় অভিযুক্তরা বাইরে কোন পথে গেছে। এরপর রুবেল মিয়া শিশুটিকে নিয়ে তাদের অনুসরণ করেন। তিনি স্টেশনের বাইরে কিছু দূরে গিয়ে দুজনকে ধরে ফেললেন। তাদের একজন সঙ্গী তখন সেখানে ছিলেন না।শনিবার মুঠোফোনে রুবেল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আমি একা ছিলাম। আমার হাতে একটি মাত্র রাইফেল আছে। আমি তখন বুঝতে পারিনি, এখন আমি বুঝতে পারছি যে আমি নিজেই বড় বিপদে পড়েছি। তখন আমার মাথায় আবেগের কিছু ছিল না। মনে হচ্ছিল পাথর নিক্ষেপকারীদের যেভাবেই হোক ধরা পড়তে হবে। তাদের জন্য কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাথর নিক্ষেপকারীদের ধরতে কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন নির্দেশনাও দিতে হয়।রুবেল মিয়া বলেন, ‘আমার চোখের সামনেই ঘটছে বলেই ধরতে পারছি। আমি খুব ছোট একটা সরকারি চাকরি করি। আমি মনে করি তাদের ধরা আমার দায়িত্ব। আমি আমার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। তাই ঘটনার পর থেকে বাড়িতে ঘটনাটি জানানো হয়নি। কারণ মা এবং অন্যরা ভাববে। টাঙ্গাইলের গ্রামের স্ত্রীকে এ বিষয়ে জানানো হয়নি।

চাকরি পেতে চাইলে জীবনের ঝুঁকি নিতে হবে

আমি যে তাদের ধরার জন্য দৌড়ে এসেছিলাম তা স্টেশনের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়তে পারে। ‘রুবেল মিয়া অভিযুক্ত দুইজনকে ধরে তাদের স্টেশন অফিসে নিয়ে যান। এ সময় দুজনের আরেক সঙ্গীও ঘটনা দেখতে স্টেশনে আসেন। এরপর তাকেও ধরে ফেলেন রুবেল মিয়া। তারপর অফিসের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আরেকটি পদক্ষেপ নেয়।পাথর নিক্ষেপকারীদের জন্য কর্তৃপক্ষ কোনো পুরষ্কার দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে রুবেল মিয়া হেসে বলেন, “আমি আসলে তা ভাবিনি। আমি দায়িত্ব নিয়েই কাজটি করছি। শুনেছি রেল কর্তৃপক্ষ ১০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিচ্ছেন যদি। তারা পাথর নিক্ষেপকারীকে ধরতে পারে, এটি প্রত্যেকের জন্য প্রযোজ্য হওয়া উচিত।তবে, কর্তৃপক্ষ আমাকে এখনও অবহিত করেনি।রুবেল মিয়া বলেন, যে ব্যক্তি পাথরটি আঘাত করেছে সে জানতে চায় কেন সে পাথরটি আঘাত করেছে। জবাবে যুবকটি বলেছিল যে ট্রেনের ভেতর থেকে কেউ তাকে অপমান করেছে, তাই সে পাথর নিক্ষেপ করেছে।

যাইহোক পরে তিনি পাথর নিক্ষেপের জন্য ক্ষমা

চেয়েছিলেন।১০ বছর সিপাহী হিসেবে কাজ করার সময় রুবেল মিয়া বিভিন্ন সময়ে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের কথা শুনেছেন। যাই হোক, এই প্রথম তিনি হাতেনাকে ধরতে সক্ষম হলেন। ঘটনার পর, বাংলাদেশ রেলওয়ে ফ্যানস ফোরাম, ট্রাফিক অ্যালার্ট বিডি এবং সিপাহি রুবেল সহ বিভিন্ন গ্রুপ অভিযুক্তদের ছবি সহ ফেসবুকে খবর শেয়ার করেছে।বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন রেলওয়ে নিরাপত্তা প্রধান পরিদর্শক। ফিরোজ আলী প্রথম আলোকে বলেন, সিপাহী ড। রুবেল মিয়া সাহস দেখিয়েছেন। তিনি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। পাথর নিক্ষেপকারীদের ধরতে রুবেল প্রথমে একাই উদ্যোগ নেন, পরে অন্যরা সহযোগিতা করেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নন-এফআইআর মামলা দায়ের করা হয়েছে।বিমানবন্দর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক। আলী আকবর বাদী হয়ে তিন পাথর নিক্ষেপকারীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২৭ ধারায় মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন- আকাশ রহমান (১৮), রিফাত ইসলাম (১৯) ও মো. হাসান (১৯)।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post