রংপুর থেকে সামিয়া যেভাবে একজন উদ্যোক্তা হয়েছেন, সামিয়া ইয়াসমিন রংপুর সরকারি কলেজের
ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী। করোনা দুর্যোগের কারণে যখন কলেজ বন্ধ হয়ে যায়, সামিয়া থেমে থাকেনি।
তিনি নিজেই একজন উদ্যোক্তা হয়েছেন এবং অন্যদেরকে তার সাথে সংযুক্ত করেছেন। এছাড়া গত দেড়
বছরে স্বেচ্ছাসেবক কাজে তার সম্পৃক্ততা বেড়েছে। কখনো তিনি দুস্থ মানুষের বাড়িতে খাদ্য সহায়তা
নিয়ে গেছেন, কখনো মানুষকে রক্তদানে উৎসাহিত করেছেন। এই ছাত্র রাজ্যাভিষেকের সময় আরও সমৃদ্ধ
হওয়ার চেষ্টা করেছে।সামিয়া রংপুর নগরীর কেরানীপাড়া এলাকায় থাকেন। চার ভাইবোনের মধ্যে
তিনি তৃতীয়। মহামারীর সময়ে নিজের আয় রোজগার করে কিভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় তা
ভাবছিলেন তিনি। এ বছরের শুরুর দিকে তিনি অনলাইন বিকিনির আশায় ফেসবুকে ‘বন্ধসুতো’ নামে
একটি পেজ খোলেন। কিন্তু হাত একেবারে খালি।
আরও নতুন নিউস পেতে আমাদের সাইট:amarjobs.xyz
রংপুর থেকে সামিয়া যেভাবে একজন উদ্যোক্তা হয়েছেন
এক বন্ধুর কাছ থেকে দেড় হাজার টাকা ধার নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। সামিয়া বলেন, ‘আমি কুমিল্লা থেকে খুব
কম দামে কয়েকটা পাঞ্জাবি কিনেছি। একদিনেই সব পাঞ্জাবি বিক্রি হয়ে গেল। লাভ এক হাজার
টাকা। তখনই সাহস পেলাম। ’ কিছু টাকা জোগাড় করার পর একটু একটু করে ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি,
ফতুয়া; সামিয়া মহিলাদের শাড়ি, থ্রি-পিস, বোরকা, গাউন, হিজাব, তাঁতের শাড়ি বিক্রি শুরু করে।
ফেসবুকে প্রচার করে ভালো সাড়া পান। মাঝে মাঝে নিজেই পণ্য ডেলিভারি করতে ছুটে যান। তিনি বলেন,
কয়েক মাসের মধ্যে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা করেছেন।সামিয়া চার বছর ধরে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের
সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এখন তিনি সংগঠনের রংপুর সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি। তাই অনেক দায়িত্ব আছে।
কলেজ বন্ধ থাকলেও সংগঠনের কাজ বন্ধ করা যাবে না। করোনায় তাদের দায়িত্ব আরও বেড়েছে।
সামিয়া বলেন, “আমরা করোনার সময় প্রায় ১২০০ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করেছি।”
করোনা দুর্যোগে যারা খাদ্য সংকটে ভুগছেন
তাদের অনেকের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। আমি শহরে স্বাস্থ্য সচেতনতা অভিযান পরিচালনা করেছি।শুধু আত্মতৃপ্তির জন্য এত কিছু উপার্জন করা এবং করা শিখছে। আপনাকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, আপনাকে ভালো কাজের সাথে যুক্ত হতে হবে, আপনি কারো উপর নির্ভরশীল হতে চান না। ‘কোভিড মহামারী আমাদের ধ্বংস করেছে। অর্থনীতি থেকে জনজীবন, সর্বত্রই আঘাতের চিহ্ন। কিন্তু মহামারী শেষে অর্থনীতির মোড় ঘুরতে বেশি সময় লাগবে না, সামাজিক জীবন চলতে শুরু করলে ক্ষত দ্রুত সেরে যাবে। শিক্ষার ক্ষতি পূরণ করতে সময় লাগবে। শুধু মহামারীর কারণে যে ক্ষতি হয়েছে তা নয় দেড় বছর নষ্ট হয়ে গেল, ডিজিটাল বৈষম্য উন্মোচিত হল, অসংখ্য ছাত্রছাত্রী বাদ পড়ল, আরো অনেক শিক্ষার্থী মানসিক বিষণ্নতায় ভুগল বা শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলল, কিন্তু এর বাইরেও আমাদের অক্ষমতা মোকাবেলা করতে হবে একই সময়ে
কাজটি কঠিন তবে অসম্ভব নয় এই দেশের
মানুষ ইতিহাস জুড়ে দুর্যোগ নিয়ে জীবনযাপন করেছে। সেটা প্রাকৃতিক হোক বা মানবসৃষ্ট, মানুষ যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলা করতে জানে। এদেশের প্রকৃতিও তিনি জানেন। একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দক্ষিণ উপকূল ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল, সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল। দুই বছর পর জীবন আগের মতোই চলছিল। সুন্দরবন ঘুরে ফিরেছে তার শক্তিতে। এটা আরো সুন্দর ছিল।কোভিড মহামারি ব্যাপক হওয়ার সময় আমার মনে হয়েছিল, মানুষকে এই দুর্যোগ হয় আরও স্বার্থপর করবে—যেহেতু সবাই আপন প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, প্রতিবেশীর দিকে নজর দেওয়া হবে না; অথবা মানুষ আরও মানবিক হবে। এখন দেখতে পাচ্ছি স্বার্থপরতাটা পশ্চিমেই বেশি দেখা গেছে। সেখানে যুক্তিতর্কও কুসংস্কার ও বিদ্বেষী রাজনীতির কাছে মার খাচ্ছে। সে তুলনায় স্বার্থপরতার প্রকাশ পুবে কম। আমরা যে খুব মানবিক হয়েছি তা নয়, কিন্তু ভয়ানক অমানবিকও হয়ে যাইনি।
Post a Comment